একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ
স্বাস্থ্যই সম্পদ এই পুরোনো কথাটির গভীরতা আমি প্রতিদিন অনুভব করি। একজন চিকিৎসক হিসেবে রোগীদের পাশে থেকে এবং একজন মানুষ হিসেবে নিজের জীবনে স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে গিয়ে।
আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি আমার অভিজ্ঞতা, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভিত্তিতে প্রমাণিত কিছু কার্যকর পদ্ধতি, আর সেই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো যেগুলো দীর্ঘমেয়াদে আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
🍎 সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
খাদ্য আমাদের জ্বালানি। আমি প্রতিদিনের খাবার বেছে নিই এমনভাবে যেন তা শুধু পেট ভরায় না, বরং শরীর ও মনকে পুষ্ট করে।
🔹 সামঞ্জস্যপূর্ণ ডায়েট: WHO-এর মতে, প্রতিদিন ফলমূল, শাকসবজি, পূর্ণ শস্য, স্বাস্থ্যকর প্রোটিন (যেমন মাছ, ডাল, ডিম), এবং ভালো ফ্যাট (যেমন অলিভ অয়েল, বাদাম) রাখা উচিত।
🔹 চিনি ও প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন: Harvard School of Public Health গবেষণায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত চিনি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট মানসিক চাপ বাড়ায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
🔹 পানির গুরুত্ব অবহেলা করবেন না: আমি দিনে অন্তত ২-৩ লিটার পানি খাওয়ার চেষ্টা করি। এতে হজম ভালো থাকে, ত্বক উজ্জ্বল থাকে এবং ক্লান্তিও কমে।
🏃♂️ নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ওষুধ নয়, নড়াচড়া দরকার
ব্যস্ত জীবনে সময় বের করা কঠিন, আমি জানি। কিন্তু প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, জগিং, যোগব্যায়াম বা যেকোনো শারীরিক কসরত আমাকে শুধু ফিটই রাখে না, মনকেও প্রশান্ত রাখে।
🔸 American Heart Association বলছে, সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
ব্যক্তিগত টিপস:
- আমি লিফট নয়, সিঁড়ি ব্যবহার করি।
- প্রতিদিন সকালের ৩০ মিনিট হাঁটা আমার রুটিনের অংশ।
- ব্যায়ামকে চাপ নয়, আনন্দ হিসেবে নিই—মিউজিক শুনতে শুনতে পছন্দ করি।
🧘 মানসিক স্বাস্থ্য (সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু)
শুধু শরীর নয়, মন ভালো না থাকলে সুস্থ জীবন অসম্পূর্ণ। চিকিৎসক হিসেবে আমি বুঝি, মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা হতাশা কিভাবে শরীরকেও অসুস্থ করে তোলে।
🔹 পাচ ওয়াক্ত নামায: আমি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত সময় মত নামাজ পরি। যার কারনে আমার মনে তেমন চাপ অনুভব করি না। এছাড়া আপনি এগুলো করতে পারেন।
🔹 মেডিটেশন এবং ধ্যান: দিনের শুরুতে ১০ মিনিট নিঃশ্বাসের ব্যায়াম বা ধ্যান মানসিক স্বস্তি দেয়।
🔹 সোশ্যাল কানেকশন: ঘনিষ্ঠ মানুষদের সাথে সময় কাটানো মানসিক রোগের ঝুঁকি কমায়।
🔹 সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না: মানসিক অসুস্থতা চিকিৎসাযোগ্য। সাইকোলজিস্ট বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।
আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট বই পড়ি বা ধ্যান করি। এটা আমাকে ব্যস্ত রুটিনে ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে।
😴 ঘুম: অবহেলিত কিন্তু অমূল্য
আমি অনেক রোগী পাই যাদের একমাত্র সমস্যা ঘুমের ঘাটতি—যা পরবর্তীতে উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বৃদ্ধি, মানসিক চাপের কারণ হয়।
🔸 National Sleep Foundation-এর মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম জরুরি।
ঘুমের রুটিন মেনে চলার জন্য আমার পরামর্শ:
- এক নির্দিষ্ট সময়েই ঘুমাতে যান এবং উঠুন।
- ঘুমানোর আগে মোবাইল স্ক্রিন এড়িয়ে চলুন।
- হালকা খাবার খান এবং একটি শান্ত পরিবেশ তৈরি করুন।
🚭 ৫. অভ্যাসে পরিবর্তন আনুন: ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন
একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি বলতে পারি, ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবন শত শত রোগের উৎস।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতি বছর প্রায় ৮ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় ধূমপানের কারণে।
আমি নিজে কখনো এসব অভ্যাসে জড়াইনি, কারণ আমি জানি স্বাস্থ্য সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।
📅 ৬. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
রোগ ধরা পড়ার আগে ধরা পড়লে তার চিকিৎসা সহজ হয়।
বছরে অন্তত একবার পুরো শরীরের চেকআপ করানো একটি দায়িত্বশীল অভ্যাস।
আমি নিজে বছরে একবার ব্লাড টেস্ট, ECG, ব্লাড প্রেশার ও সুগার লেভেল চেক করি। শুধু রোগ ঠেকাতে নয়, নিজের উপর যত্ন নেওয়ার জন্য।
💡 শেষ কথা: সুস্থতা কোনো গন্তব্য নয়, এটি একটি পথচলা
একজন চিকিৎসক হিসেবে বলছি, আপনি যদি ছোট ছোট অভ্যাসে পরিবর্তন আনেন। ভবিষ্যতে বড় রোগগুলো আপনার জীবন থেকে দূরে থাকবে।
আমি নিজে এই পদ্ধতিগুলো মেনে চলি, কারণ আমি জানি পরিবার, কাজ, স্বপ্ন সবই অর্থহীন হয়ে পড়ে যদি আমি অসুস্থ থাকি।
✅ এখনই শুরু করুন:
- আজ একটু হাঁটুন।
- এক গ্লাস পানি খান।
- পরিবারকে সময় দিন।
- রাতের ঘুম ঠিকমতো নিন।
আপনার সুস্থ জীবনই আপনার প্রিয়জনদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
✍️ লিখেছেন:
ডা. শম্পা দাস,
এমবিবিএস, অভিজ্ঞ পারিবারিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য পরামর্শক
We have a team of specialized doctors, each experts in their respective fields, dedicated to honing their skills and providing top-tier care.