কোন কোন খাবারে এলার্জি আছে তার তালিকা

বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ লোক ফুড এলার্জিতে ভুগছেন। এটি হালকা উপসর্গ থেকে শুরু করে কঠিন প্রতিক্রিয়া পর্যন্ত হতে পারে। এই প্রতিক্রিয়া হতে পারে হাঁচি-কিচি থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্ট এবং রক্তচাপ কম হয়ে যাওয়া পর্যন্ত।

ফুড এলার্জিকে কীভাবে সনাক্ত করা যায় এবং এর থেকে কীভাবে বাঁচা যায় তা জানতে এই লেখাটি পড়ুন।

"কোন কোন খাবারে এলার্জি আছে তার তালিকা"

ফুড এলার্জি কি এবং কেন হয়

ফুড এলার্জি হল একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা। এটি হয় যখন শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি খাবারকে বিপজ্জনক বলে মনে করে। এই প্রতিক্রিয়ায় শরীর হিস্টামিন এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ মুক্ত করে।

এটি বিকল্প খাদ্যসামগ্রী, নিরাপদ খাবার এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ফুড এলার্জির প্রাথমিক কারণসমূহ

শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া খাদ্য এলার্জির কারণ হতে পারে। এলার্জির ঝুঁকি বংশগত ইতিহাস, ভিটামিন ডি-এর অভাব, স্থূলতা এবং অত্যধিক পরিচ্ছন্নতার কারণে হতে পারে।

শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া

ফুড এলার্জি হয় যখন শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খাদ্য অণুর সাথে সংযুক্ত হয়। এটি হিস্টামিনের মতো প্রদাহজনক পদার্থ মুক্ত করে।

এটি বিকল্প খাদ্যসামগ্রী, নিরাপদ খাবার এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণকারীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

এলার্জির সাধারণ উপসর্গসমূহ

ফুড এলার্জির সাধারণ উপসর্গগুলি হল ফুসকুড়ি, হাইভস, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট।

ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, বমি এবং মাথা হাল্কা হয়ে যাওয়াও একটি উপসর্গ।

উন্নত দেশগুলিতে এলার্জির হার বিকাশশীল দেশের তুলনায় কম। কিন্তু এটি এখনও একটি বিস্তৃত সমস্যা।

“শিশুদের ক্ষেত্রে এলার্জির ঝুঁকি বেশি, যদিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে লক্ষণগুলো কমে যেতে পারে।”

কোন কোন খাবারে এলার্জি আছে তার তালিকা

অনেকের কাছে খাদ্যের কিছু উপাদানের প্রতি এলার্জি থাকে। এটি শরীরের রক্ষাকার্যের কারণে হয়। শাক-সবজি এলার্জি, মাছ-মাংস এলার্জি এবং অন্যান্য খাদ্যের প্রতি এলার্জি বেশি দেখা যায়।

গরুর দুধ, চিনাবাদাম, ডিম, শেলফিশ, মাছ, গাছ বাদাম, সয়া, গম, চাল এবং ফল এলার্জির কারণ হয়। গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুন ও টমেটোতেও এলার্জি থাকতে পারে।

কোন খাবারে এলার্জি আছে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এভাবে এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

এলার্জি আছে এমন খাবারের তালিকা

১. দুধ (Cow’s Milk): এটি শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ এলার্জি।

২. ডিম (Eggs): বিশেষ করে ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন থাকে যা এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।

৩. বাদাম (Peanuts): বাদাম এবং গাছের বাদাম (tree nuts) আলাদা। বাদাম এলার্জি প্রায়শই গুরুতর হতে পারে।

৪. সয়া (Soy): সয়া প্রোটিনের প্রতি এলার্জি সাধারণত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।

৫. গম (Wheat): গমের এলার্জি সাধারণত শিশুদের মধ্যে দেখা যায় এবং অনেকেই এটি বয়স বাড়লে কাটিয়ে ওঠেন।

৬. গাছের বাদাম (Tree Nuts): যেমন: আখরোট, কাজু, পেস্তা ইত্যাদি।

৭. শেলফিশ (Shellfish): ক্রাস্টেসিয়ান (যেমন: চিংড়ি, কাঁকড়া) এবং মলস্ক (যেমন: ঝিনুক, মসল) উভয়ই শেলফিশের অন্তর্ভুক্ত।

৮. মাছ (Fish): বিভিন্ন ধরনের মাছ যেমন স্যামন, টুনা ইত্যাদি মাছের প্রতি এলার্জি দেখা দিতে পারে।

৯. তিল (Sesame): সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিলের এলার্জি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে প্রধান এলার্জির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অন্যান্য খাবার যেগুলোতে এলার্জি

বাংলাদেশে কিছু বিশেষ খাবারের প্রতি এলার্জির প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • গরুর মাংস (Beef): ৬৭% লোক এই খাবারকে এলার্জির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
  • বেগুন (Brinjal): ৪৭% লোকের মধ্যে বেগুনের প্রতি এলার্জি রয়েছে।
  • হিলসা মাছ (Hilsa): ৪৫% লোক এই মাছকে এলার্জির কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
  • চিংড়ি (Shrimp): ২৩% লোক চিংড়ির প্রতি এলার্জির কথা বলেছেন।
শাক-সবজি এলার্জি

খাদ্য এলার্জি প্রতিরোধে করণীয়

খাদ্য এলার্জি একটি বড় সমস্যা। বিশেষত শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। এলার্জি প্রতিরোধ করতে আমাদের কিছু করতে হবে।

এলার্জি প্রতিরোধী খাবার

কলা, লেবু, পেঁয়াজ এবং আপেল এলার্জি প্রতিরোধে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটসমৃদ্ধ মাছ এবং দইও ভালো।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

কিছু খাবারে এলার্জি আছে তার তালিকা জানা গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের লেবেল পড়ে নিয়ে সতর্ক থাকুন।

খাদ্য এলার্জি প্রতিরোধে কী করা যায়?

কলা, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল এবং লেবু খাওয়া উপকারী।

পেঁয়াজ, আপেল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আঙুর খাওয়া ভালো।

ওমেগা-৩ ফ্যাটসমৃদ্ধ মাছ এবং প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উপকারী।

হলুদ এবং আনারস খাওয়া ভালো। এলার্জি সৃষ্টিকারী খাবার এড়িয়ে চলুন।

খাবারের লেবেল পড়ে নিন। অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যাড্রেনালিন ইনজেকশন চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

চিকিৎসা পদ্ধতি

খাদ্য এলার্জি এর চিকিৎসায় অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যাড্রেনালিন ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। গুরুতর দুগ্ধজাত দ্রব্য এলার্জি এর ক্ষেত্রে অ্যাড্রেনালিন ইনজেকশন বিশেষ করে জরুরি। এই ঔষধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

FAQ

কোন কোন খাবারে এলার্জি হতে পারে?

গরুর দুধ, চিনাবাদাম, ডিম এবং শেলফিশ এলার্জির কারণ হতে পারে। মাছ, গাছ বাদাম, সয়া, গম, চাল এবং ফলও এলার্জির কারণ হতে পারে।

গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুন এবং লাল সবজি যেমন গাজর এবং মিষ্টি কুমড়াও এলার্জির কারণ হতে পারে।

খাদ্য এলার্জির প্রাথমিক কারণ কী?

খাদ্য এলার্জি হয় যখন শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা খাদ্য অণুর সাথে সংযুক্ত হয়। এটি হিস্টামাইন মুক্তি করে।

পারিবারিক এলার্জির ইতিহাস, ভিটামিন ডি-এর অভাব, স্থূলতা এবং অত্যধিক পরিচ্ছন্নতাও এলার্জির কারণ হতে পারে।

খাদ্য এলার্জির সাধারণ উপসর্গ কী?

খাদ্য এলার্জির সাধারণ উপসর্গ হল ফুসকুড়ি, হাইভস, চুলকানি।

শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, বমি এবং মাথা হাল্কা হওয়াও এলার্জির লক্ষণ।

এগুলি ছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের মসলা যেমন মরিচ, আদা, ধনিয়া, জিরা ইত্যাদিও বাংলাদেশে খাদ্য এলার্জির কারণ হতে পারে।

এলার্জির লক্ষণগুলি সাধারণত খাদ্য গ্রহণের পর মিনিট থেকে ঘণ্টা পরে শুরু হয় এবং এতে ত্বকে র‍্যাশ, শ্বাসকষ্ট, এবং কখনও কখনও অ্যানাফাইল্যাক্সিস পর্যন্ত হতে পারে। তাই খাদ্য এলার্জি থাকলে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।

Leave a Comment